আমি বিশ্বকাপ জেতাই আর ব্যাটও করি
আমি আর ব্যাট করি আর বিশ্বকাপও জেতাই
পূর্ব
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের চব্বিশটি জেলার একটি রাঁচি। এই জেলাকে ধরা হয় ওই
অঞ্চলের রাজধানী হিসেবে। সতেরশো সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির দ্বারা এই অঞ্চলের মানুষ চরম নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার
হয়েছিল।
১৯৮১
সালের ৭ জুলাই এই রাঁচিতে পান সিং ধোনি এবং দেবকি দেবীর ঘর আলো করে
মাহেন্দ্র সিং ধোনি না আসলে উপরের সব হয়তো দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যেত!
দুই ভাই আর এক বোনের সংসারে সবার শেষে পৃথিবীর আলো দেখেন ধোনি। সবার আদরের মাহি। কপিল দেবের ভারত যখন লর্ডসে ভারতবর্ষের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন মাহি তখন দুই বছর সতেরো দিনের ছোট্টোটি। ক্রিকেট তখনো ধোনির স্বপ্নের সাথী হয়নি। আরেকবার ভারত যখন সেই বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পায় মাহি তখন এই দলের অধিনায়ক। মাঝখান দিয়ে একে একে কেটে গেছে আটাশ বছর!
দুই ভাই আর এক বোনের সংসারে সবার শেষে পৃথিবীর আলো দেখেন ধোনি। সবার আদরের মাহি। কপিল দেবের ভারত যখন লর্ডসে ভারতবর্ষের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন মাহি তখন দুই বছর সতেরো দিনের ছোট্টোটি। ক্রিকেট তখনো ধোনির স্বপ্নের সাথী হয়নি। আরেকবার ভারত যখন সেই বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পায় মাহি তখন এই দলের অধিনায়ক। মাঝখান দিয়ে একে একে কেটে গেছে আটাশ বছর!
নুয়ান
কুলাসেকারার যে বল লং অন দিয়ে উড়ে গিয়ে ছক্কা হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে সকল
ভারতীয়র মনে রূপকথার গল্পের মতো শিহরণ জাগাতে পেরেছিলেন বোধহয় মাহেন্দ্র সিং
ধোনি। বোধহয় সেই ছক্কার ছবিতেই ক্রিকেট হাঁপছাড়ার একটা নিঃশ্বাস ফেলে।
যেই নিঃশ্বাসে মিশে থাকে শচীন নামক ক্রিকেট রূপকথার সোনালী ট্রফি ছুঁয়ে দেখার
পূর্ণতা। তা তো ওই ধোনির কল্যাণেই!
আবার
ফিরে যাই সেই ছোট্ট মাহি'তে। বোনের সাথে পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া শিখেছে
মাহি। পড়ালেখায় মাহি উইকেট কিংপিংয়ের মতো ক্ষিপ্র না হলেও কচ্ছপের মতো ধীরগতির
নয়। ফুটবলটা তার কাছে প্রিয়। প্রিয়’র তালিকায় থাকে টেবিল টেনিস আর
বাস্কেটবলও। কিন্তু সেকেন্ডের ভগ্নাংশে স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলা গ্লাভসজোড়া
কিংবা সিগনেচার হেলিকপ্টার শটের ব্যাট তখনো মাহির পছন্দের জায়গায় স্থান
পায় না।
ফুটবলের
গোলকিপিংটা মাহি করেন মনের আনন্দে। ডিএভি জহর বিদ্যা মন্দির, শ্যামলী (বর্তমান জেভিএম, শ্যামলী, রাঁচি) এখানেই পড়াকালীন স্কুলের ফুটবল
টিমে সুযোগ পায় মাহি। টিমের গোলরক্ষক সে-ই। সেখানে বাঁধ সাধেন কোচ দেভেল সানাই।
মাহিকে পরামর্শ দেন ক্রিকেটের উইকেটকিপিং এ মনোযোগী হতে। স্কুল
ক্রিকেটের কোচ কেশভ ব্যানার্জির কল্যাণে প্রথমবার গ্লাভসজোড়া হাতে তোলেন মাহি। সে
থকেই নানারূপের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নবাব হয়ে উঠার সেই শুরু এক কিংবদন্তির।
জীবনের
বাস্তবতা গুলো এতটাই কাছ থেকে দেখেছেন যে কখনো ভাবেননি দেশের হয়ে
ক্রিকেট খেলতে পারবেন। কিন্তু সব জল্পনা পাশে রেখে নীল জার্সি গায়ে ২০০৪ সালে
একদিন অভিষেক হয়ে যায় ধোনির। অভিষেকের ঘোর কাটিয়ে উঠার আগেই রানআউটের
শিকার হয়ে শূন্যে রানে শেষ হয় সে ম্যাচ। স্কুল ক্রিকেটে কিপিংয়ের জন্য দলে
জায়গা পাওয়া ছেলেটার ব্যাটিংটা খুব পছন্দ। প্র্যাকটিসে কোচ ব্যাটিং করতে
দিতেন না বলে লুকিয়ে লুকিয়ে ব্যাট করতেন। সেখানেও উপরে ব্যাটিং করার সুযোগ
এসেছিল হাতেগোনা। জাতীয় দলে এসেও তারকার ভীড়ে উপরে ব্যাটিং করার সুযোগ হয়
না। টানা চার ম্যাচে নিচের দিকে নেমে ব্যর্থতার বৃত্তেই তাই আবদ্ধ থাকেন।
তবে
নিজেকে প্রথম প্রমাণ করা পঞ্চম ম্যাচে। উঠে আসেন তিন নাম্বার পজিশনে।
প্রমোশনের সাথে সাথেই ব্যাটও কথা বলা শুরু করে দেয়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী
পাকিস্তানের বিপক্ষে সেদিন খেলেন ১৪৮ রানের অনবদ্য ইনিংস। সুযোগের সদ্ব্যবহার
করার মন্ত্রটা যেন এক ঝলকে শিখিয়ে দেন তিনি। জীবনের সাথে ক্রিকেটের মিল
বোধহয় এখানেই! ব্যাটটাকে ক্রিকেটের ভাষায় কথা বলতে শিখিয়ে দ্রুততম ৪২ ইনিংসে
উঠে আসেন আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থানে। পেছনে ফেলেন
তখনকার অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে।
তাঁর
এমন ঔদ্ধত্য বার্তায় গমগম আওয়াজে মুখরিত তখন মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে। গ্যালারিজুড়ে
‘বন্দে মাতে রাম’৷ ধোনির কাছে মুহূর্তের বিবেচনায় জীবনের শ্রেষ্ঠ কয়েক মিনিট।
ভারতীয় ক্রিকেটের অমরত্বে মুহুর্তেই যে ছবি জায়গা করে নিয়েছিল। সেই ছবির নায়ক কেশভ
ব্যার্নাজির ছোট্ট মাহি। রাঁচির মাহি। সারা ভারতের নিঃশ্বাস ফেলা সেই শটেই ছবির
পূর্ণতা পেয়েছিল। ততক্ষণে মাইক্রোফোনে রবি শাস্ত্রী ছড়িয়ে দিলেন ভারত আর ধোনির
শ্রেষ্টত্ব।
‘Dhoni finishes off in style. A magnificent strike into the
Crowd. India lifts the world cup after 28 years. Party Started at dressing
room. And its an Indian captain who’s been absolutely magnificent in the night
off the final.’
টুকরো
টুকরো এই ছবিগুলোই অখন্ড ধোনি। চ্যাপেলরাজের কানা গলিতে হারিয়ে যাওয়া ভারতীয়
ক্রিকেটকে নিয়ন উদ্ভাসিত মসৃণ হাইওয়েতে ফিরিয়ে আনার রূপকার তো এই ধোনিই।
উত্তপ্ত
পরিস্থিতিতে তিনি হিমশীতল হিমালয়। সবার যখন পরিস্থিতির চাপে জান বেরুনোর অবস্থা
তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পথিক। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ক্ষিপ্র চিতা।
সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ভেঙে দিচ্ছেন স্ট্যাম্প। একটু পা তুলেছ, বেল দুটো উড়ে গেছে চোখের পাতার পলকে।
স্টেপ আউট করতে ভয় পাইয়ে দিয়েছেন কতো বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানকে। এমন-ই সেকেন্ডের
হেরফেরের মাঝে হঠাৎ আপনি দেখেন এক উড়ন্ত বাজপাখিকে। উড়ে গিয়ে ধরছেন অবিশ্বাস্য সব
ক্যাচ। উইকেটের পেছন থেকে ৬৩৪ ক্যাচ আর ১৯৬ স্ট্যাম্পিংস সেটারই একটা ছোট্ট ঝলক
মাত্র।
আজ সক্ষমতার
নদীতে পড়েছে বয়সের পলি। সারা ভারতে যেন একটাই জিজ্ঞাসা ধোনি কবে অবসর নিবেন?
একজন ক্রিকেটারের
জীবনে এটাই বোধহয় নিয়ম; এটাই বোধহয় নিয়তি! তবু ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনি একজন। যিনি বদলে দিয়েছেন
টিম ইন্ডিয়াকে। যিনি সাফল্য এনে দিয়েছেন শিরোপা জয়ের গল্পে। যুগ-যুগান্তরের পথে
নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই ক্রিকেট কিংবদন্তির আজ ৩৯ তম জন্মদিনে অসাধারণ
সব মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য থাকছে ভালোবাসা অবিরাম।
কোন মন্তব্য নেই